চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্য শাকিল তরফদার। তাঁর বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের শুকদাড়া গ্রামে।শাকিল তরফদারমোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। তাদের চোখে-মুখে শোকের ছায়া। জটলার ভেতর থেকে মাঝেমধ্যে কেউ বলে উঠছেন, আর বেশি সময় লাগবে না, কাছাকাছি এসে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে হঠাৎ অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ ভেসে এল। অ্যাম্বুলেন্সের সামনে-পেছনে বেশ কয়েকটি গাড়ি। ‘শাকিল এসে গেছে, শাকিল এসে গেছে’—বলে ওঠেন কেউ কেউ।
শাকিল ফিরেছেন, তবে কফিনে করে। এর আগে কখনো তাঁকে হয়তো এভাবে গ্রামের মানুষ বরণ করে নেয়নি। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা শাকিলকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর পর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান। পরে দোয়া পড়তে পড়তে কফিন কাঁধে নিয়ে বাড়ির দিকে নিয়ে যান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। কফিনের পেছনে শত শত মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। দাফনের আগে তাঁকে গার্ড অব অনার দেন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা
এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে শাকিল তরফদারের মরদেহ ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে সেখান থেকে লাশ খুলনায় পাঠানো হয়।
নিহত শাকিল তরফদারের লাশ দাফনের আগে তাঁকে গার্ড অব অনার দেন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা
মো. ছালেহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাঁরা অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা যান, তাঁরা সাধারণত শহীদ হন। শাকিলও শহীদ হয়েছেন। তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মৃত্যুতে সারা দেশের মানুষের হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত। সবাই শোকে মুহ্যমান। আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যেন আমরা এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশকে আরও ভালো সেবা দিতে পারি।’ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শাকিলের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি। শাকিলের বড় ভাই মো. আসাদুজ্জামান বটিয়াঘাটা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের অস্থায়ী কর্মী। তাঁর চাকরি স্থায়ী করার জন্য সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।
তিন ভাইয়ের মধ্যে শাকিল সবার ছোট। বড় ও মেজ ভাই বিবাহিত। শাকিলের মেজ ভাই মনিরুজ্জামান তরফদার এনজিওকর্মী। ২০১৮ সালের জুনে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি পান শাকিল। প্রথমে বটিয়াঘাটা ফায়ার স্টেশন ও পরে মোংলা ইপিজেডে ফায়ার স্টেশনে চাকরি করতেন। প্রায় ছয় মাস আগে চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে বদলি হয়ে যান তিনি। সীতাকুণ্ডের ওই কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগলে স্টেশনের সদস্যদের সঙ্গে তিনিও আগুন নেভাতে অংশ নিয়েছিলেন।